নারী তুমি তিলোত্তমা – নারী দিবসের বিশেষ লেখা
(এক)
কুসুম বাড়ির বড়ো মেয়ে । বাবা শয্যাশায়ী তাও প্রায় সাত বছর । মা-ও অসুস্থ । নিজের শখ শৌখিনতাকে বিসর্জন দিয়ে সাত বছর ধরে একা সংসার টানছে কুসুম । বোনকে ডাক্তার আর ভাইকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমে সামিল । ইচ্ছে থাকলেও অভাবের সংসারে নিজের পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি সে। তাই ভাই বোনের মাধ্যমে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চায় সে । কন্যাসন্তান হয়ে জন্মানোর অপরাধে যে বাবা তাকে একদিন মেনে নেয়নি সেই বাবা আজ সবার কাছে গর্ব করে বলে, “কুসুম আমার মা লক্ষ্মী..”
(দুই)
—” শেষে কিনা মেয়ে !!!!! বংশে বাতি দেবে কে ??” ঝাঁঝিয়ে ওঠেন বীণা দেবী ।
—” আপনি দেখবেন মা ও একদিন বংশের মুখ উজ্জ্বল করবে..” করুন সুরে বলে কন্যাসন্তানের মা অঞ্জলি ।
—” ওকে আমরা মানি না । এ মেয়ে জন্মানোর চেয়ে মরাই ভালো ।”
এক কাপড়ে সেদিন অঞ্জলি মেয়ে অনন্যাকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল শ্বশুরবাড়ি থেকে । একা মানুষ করেছেন মেয়েকে ।
সেই মেয়ে আজ দেশের এক নম্বর গাইনোকলজিস্ট । দেশ- বিদেশে নাম । আজ তার বাবা ও পরিবার তাকে নিয়ে গর্ব করলেও সে বলে,” আমি কেবল আমার মা-এর মেয়ে..”
(তিন)
গা-এর রং কালো হওয়ায় আজীবন সইতে হয়েছে অপমান লাঞ্ছনা । বারবার পাত্রপক্ষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে দেবশ্রী সিদ্ধান্ত নেয় আর না । হাওড়া ব্রিজের ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার আগের মুহূর্তে হাত ধরে বাঁচায় কমলিনী ।
কেটে গেছে দীর্ঘ এক বছর ।
—“এবছর সেরা business woman award পাচ্ছেন মিস দেবশ্রী সেন…”
প্রেক্ষাগৃহ ফেটে পড়ছে করতালিতে । দর্শকাসনের প্রথম আসনে বসে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলেন এক গর্বিত বাবা মা ।
সেদিনের সেই কালো হেরে যাওয়া মেয়েটি আজ তার বন্ধুর অনুপ্রেরণায় দেশের বিখ্যাত গহনা ব্যবসায়ী ।
এঁরা সবাই কাল্পনিক চরিত্র হলেও এরকম হাজার হাজার কুসুম , অঞ্জলি , অনন্যা , দেবশ্রী — ছড়িয়ে আছেন আমাদের চারপাশে । নিজ নিজ ক্ষেত্রে এঁরা সবাই সফল । এঁদের কাছে বছরের 365 দিনই “নারীদিবস”…
কারণ , নারী তুমি তিলোত্তমা ..❤️