থাক হয়েছে আর দরদ দেখাতে হবে না, যাও এফ বি করো গে যাও ,আজ অবধি কোনওদিন আমার শরীর খারাপ হলে কুটোটা নেড়ে দেখেছো। আমাকেই শরীর খারাপ নিয়ে সব কাজ করতে হয়েছে।
কোনোদিন করিনি,নাহ! বলতে পারলে এমন কথা! মুখে বাঁধল না, না। ভুলেই যায় সবাই , দিন পেরোলে। ভেবে দেখো, মনে পড়বে, আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। সেই যে সেবার তুমি অরুণদের বাড়িতে গিয়ে সারাদিন থাকলে, ওর বৌ এর শরীর খারাপ হয়েছিল। আমি সবার জন্য ডাল, ভাত, আলুমাখা, পাঁপড় ভাজা করে রাখিনি। অরুণ খেয়ে কতো প্রশংসা করলো আমার রান্নার, ও নাকি কোনোদিন ওতো সুন্দর ডাল আর আলুমাখা খায়নি।
ওরকম সবাই বলে।
বাহ! তুমিও তো বলেছিলে সেদিন খুব ভালো হয়েছে।
লোকের সামনে খারাপ বলবো, তাই বলেছিলাম।
তাই তো! তার মানে আমি খারাপ রান্না করি, সেই জন্যই তো আমি রান্নাঘর থেকে উনিশ হাত দূরে থাকি। তবুও সেবার তোমার পেট ব্যথা হলো। সারাদিন শুয়ে থাকলে, আমি অফিস কামাই করে প্রেশার কুকারে ভাত বানালাম না! অবশ্য তুমি চাল আর জলের মাপটা বলে দিয়েছিলে। মনে নেই তো? থাকবেও না। পুরুষদের অবদান তো আর মনে রাখার দরকার নেই। যাও ভালো, আমি কিছু করিনা তো করিনা। ম্যায় বদনাম তো বদনাম।
পতি নম্বর ওয়ান হতে পারবো না।
তা পারবে কেনো! দেখোগে যাও, তোমার বন্ধুরা, জামাইবাবু, ভগ্নীপোত আর কতো পুরুষ মানুষ আছে। যারা সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে, স্ত্রীকে কেমন সুন্দর চা করে খাওয়ায়। আর তুমি কোনোদিন, বলো কোনোদিন করেছো, আমার জন্য? আর উল্টে সকাল থেকে উঠে কাকের মতো চা চা করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নাও। অসহ্য!
এই তো তুমি বিয়ে বাড়িতে মাটন ভালো হয়েছে,ভালো হয়েছে করে খেয়ে এলে, আমি চোখের ইশারায় মানা করছিলাম। যে খেয়োনা, ভুগতে হবে। তুমি তো দেখতেই পেলে না। তারপর নয় ছয় পনেরো। গেলে আর আসলে। এই মিয়া না বলতেই সোডা, ডাব, ওষুধ এনে দেয়নি।
ও তো আনতেই হবে, না হলে তোমার আর ছেলের, ডান হাত উঠবে না যে। ও তো নিজের স্বার্থ সিদ্ধির ধান্দা। ভেবেছো আমি বুঝি না কিছু।
পারলে এরকম করে বলতে জানু। তোমার হৃদয়ে আটকাল না। মুখেও না। যাও কথা দিলাম। এরপর তোমার কোনোদিন শরীর খারাপ হলে ছুটি নিয়ে সারাদিন তোমার যত্ন করবো আর রান্না করে খাওয়াবো। দেখে নিও। আর ক্যালেন্ডারে দাগ মেরে ঐ ক্যালেন্ডার ভল্টে রেখে আসবো প্রমাণস্বরূপ!
দেখবো তো বটেই,তোমাদের পুরুষদের ভালোবাসা কেমন মুসলমানের মুরগি পোষা তা তো আমার হাড়ে হাড়ে জানা আছে।
উপরিউক্ত কথাগুলো বুঝতেই পারছেন জনৈক স্বামী স্ত্রীর। যেহেতু স্বামী কথা দিয়ে ফেলেছে যে পরেরবার সে তার স্ত্রীর যত্ন করবেই। স্ত্রীকে তো পরখ করে দেখতেই হয়। যে স্বামীটি তার সত্যিবাদী যুধিষ্ঠির না সুবিধাবাদী মনুষ্যবীর। তার জন্য স্ত্রী মনে মনে এক ফন্দি এঁটে ফেললেন।
পরের দিন সকাল বেলায় রোজকার মতন স্বামী মহাশয় ঘুম থেকে উঠেই টুক টাক কাজ, ঐ যে ছাদের দরজা খোলা, জলের পাম্প চালানো এসব করে, সোফাতে এসে বসে, মোবাইলটা খুলে নোটিফিকেশন চেক করতে লাগলেন, আর অপেক্ষারত থাকলেন, কখন আসবে এক কাপ ধূমায়িত চা।
বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর যখন তিনি দেখলেন। যে তাঁর স্ত্রীর কোন সারাশব্দ নেই। কি ব্যাপার? প্রমাদ গুনলেন! শরীর খারাপ হলো না তো আবার! যা কেলো! কাল আবার কথা দিয়ে ফেলেছিলেন, মনে পড়ে গেল। মোবাইল টেবিলে ফেলে একলাফে, বেড রুমে গিয়ে দেখেন। নাসিকা তখন শিঙে ফুঁকছে সহধর্মিণীর। সাহস করে ঠেললেন একটু- বলি শুনছ!
স্ত্রী কাত হলেন অন্য দিকে। কি গো উঠবে না?
না গো, শরীরটা আজ বোধহয় আবার খারাপ হলো। পেট ব্যথা করছে গো! ভোর বেলায় একবার বমিও হয়েছে। চিন চিনে একটা ব্যথা হচ্ছে। তুমি আজ না হয় চা টা, একটু বাইরে খেয়ো এসো।
কখন বমি হলো। আমাকে ডাকলে না, কেন?
না তোমাকে আর ডাকিনি। ঘুমোচ্ছিলে। এত খাটা খাটনি তোমার। হাসি এসে যাচ্ছিল মুখে, কায়দা করে চেপে নিলেন, যাতে স্বামী বুঝতে না পারেন আসল ব্যাপারটা।
আচ্ছা। তাহলে না হয়, আমি একবার চেষ্টা করে দেখি চা টা বানাতে। এই বলে স্বামী চা বানাতে গেলেন। আর স্ত্রী মুচকি হেসে পাস ফিরলেন। অন্যভাসের হাত, তবুও চা হলো, তৈরি। তবে কিচেন টপ টা, একটু চা এর জল, চাপাতা, চিনি, দুধ সমস্ত উপকরণ, যা যা লাগে চা বানাতে, সব কিছুরই স্বাদ সবার আগে পেল। পেয়ালাতে চা ঢেলে, ট্রেতে করে নিয়ে, সদর্পে স্ত্রীর কাছে এসে,বিনম্র ভাবে মধুর বাক্যে বললেন- চায়ে মেমসাহেব!
স্ত্রী, বললেন, তুমি কেন কষ্ট করতে গেলে বলতো, তোমার আবার এসবের অভ্যাস নেই। বলে ট্রের থেকে কাপ তুলেলেন। স্বামী তার কাপ এনে চুমুক দিলেন। তার নিজের মুখেই চা কেমন যেন লাগছিল। একটু বেশি তেতো হয়ে গেছে। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলেন ওদিক দিয়ে কি মন্তব্য আসে তার অপেক্ষায়।
স্ত্রী চায়ে চুমুক দিলেন। মনে মনে বললেন, বাবা চায়ের কি ছিরি! এই চা যদি আমি করতাম, তুমি আমাকে ঘেঁটে ঘ করে দিতে। মুখে বললেন, বাহ! দারুণ হয়েছে তো চা টা। ঘরের গৃহিনীরা হলেন, পাক্কা ম্যানেজার, তারা জানেন কাজ নিতে গেলে কিভাবে উৎসাহ দিতে হয়। চা শেষ করে,স্ত্রী বললেন, যাও তুমি তৈরি হয়ে নাও, আর বাবুকে ডাকো। আমি উঠে ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করি।
না না থাক! তুমি আরাম করো। আমি আজ অফিস যাবো না, তোমার শরীর খারাপ। শোনো না,তুমি বরং একটা গ্যাসের ওষুধ খাও। আর পেট ব্যথা করলে, পেট ব্যথার ওষুধ টাও খেও। আমরা ব্রেকফাস্টে কর্নফ্লেক্স খেয়ে নেবো আজ সবাই।
স্ত্রী মনে মনে বললেন, হ্যাঁ এখন তো কর্নফ্লেক্সই বলবে, আর আমি করলে তখন, রুটি না হলে বাবুর চলে না। মুখে বললেন, আচ্ছা ঠিকাছে তাই করো।
স্বামী ঠিক করলেন,আজ অফিস ছুটি, আজ স্ত্রীর সেবা করবেন তিনি। সবাই মিলে প্রাতরাশ সারা হলো, দুধ, কর্নফ্লেক্স আর তার মধ্যে কিছু আপেলের টুকরো দিয়ে। ছেলে বলল, বাবার ছুটি কি মজা! স্ত্রী তখনো শুয়ে মনে মনে স্বামীর উদ্দেশে বললেন- দেখো কতো গমে কতো আটা!
এদিকে বেলা বাড়তে লাগল, স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে স্নানটান, পুজো আর্চা সেরে আবার বিছানায় শুতে গেলেন। মাঝে মাঝে একটু আধটু শরীর খারাপের অভিনয় করতে থাকলেন।
স্বামী বললেন, শোনো না, আমি তোমার জন্য ভাত, মুসুর ডাল আর আলু সিদ্ধ করে দিচ্ছি,খেয়ে নিয়ো। পেট ভালো হবে। আর আমরা দেখি কি খাই? ছেলেটা তো একটু ননভেজ কিছু খাবে। এই বলে কাজে হাত লাগালেন, কিছুক্ষণ পরেই ভাত ডাল আর আলু সিদ্ধ তৈরি হয়ে গেল। ওটুকু তো উনি জানেন, আর ঐ রান্নার স্বাদ অরুণ এখনো ভোলেনি যখন, তার মানে এই রান্নাটাতে তার একদম সিদ্ধহস্ত এবং সার্টিফায়েড।
দুপুর বারোটা নাগাদ স্বামি দেখলেন, তার স্ত্রী শরীর খারাপের গুঁতোয় একেবারে অঘোরে ঘুমাচ্ছেন, আর তাঁর নাসিকা রন হুঙ্কার দিচ্ছে। ছেলেকে বললেন, বাবু তুমি পড়ো, আমি দশ মিনিটে আসছি। এই বলে বেরোলেন মোটরবাইক টাকে নিয়ে। একটা নাগাদ ফিরে এসে দেখেন। ছেলে দিব্বি টিভিতে কার্টুন দেখছে। আর স্ত্রী তখনো ঘুমের দেশে। হবে না! অযাচিত ছুটি কি রোজ রোজ পাওয়া যায়! আজ কর্ম বিরতি। যাই হোক, ছেলেকে বললেন, বাবু তুমি টি ভি দেখছো। পড়েছিলে, নাকি আমি যেতেই চালু হয়ে গেছো। বামুন গেলো ঘর আর লাঙল তুলে ধর! হ্যাঁ! কি ব্যাপার শুনি!
না বাবা! পড়েছিলাম তো। একটু খানি চালালাম এই মাত্র।
বুঝেতে পেরেছি। এবার যাও দেখি, স্নান টা সেরে ফেলো কুইক কুইক। তারপরে দেখো আমরা কেমন দারুণ লাঞ্চ করবো।
ছেলে কৌতূহলী হয়ে বলে, কি বাবা? কি লাঞ্চ?
আমেনিয়ার মাটন বিরিয়ানি। তোমার ফেবারিট! আর মা কি খাবে?
মায়ের তো শরীর খারাপ, দেখছো না পেট ব্যথা, বমি, কেমন মমির মতন চুপচাপ শুয়ে আছে। আর সকালে আমি মায়ের জন্য স্পেশাল খাবার বানালাম না, দেখো নি? তাই তো আমি ছুটি নিলাম।
যাও যাও তাড়াতাড়ি স্নান সেরে আসো দেখি। চল বাবু, তুই আর আমি দুজনে আজ একসাথে স্নান করি, মজা হবে, কি বল! এই না বলে বাপ বেটা বাথরুমে গিয়ে ঢুকল।
আর তখনি সব কথা শুনে, মুখ বুঁজে থাকা যে কি পরিমান কষ্টের,এই মনে মনে ভেবে মুখ বন্ধ করে, স্ত্রী ঝট করে উঠে সিধে কিচেনে, হ্যাঁ সত্যি তো, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। কিচেনে সুন্দর প্যাকেটে করে আনা দু দুটো বিরিয়ানির প্যাকেট। ভাবলেন, এই ছিল তোর মনে! স্ত্রী সেবা! না স্বয়ংসেবা! আমি ভাত আর ডাল সিদ্ধ আর নিজেরা মাটন বিরিয়ানি।!আমিও না! বলতে পারতাম তো, জ্বর জ্বর লাগছে ! তাহলে ও তো আমার জন্যও আনতো। পেট খারাপ বলেই ফেঁসে গেলাম। নিজের ওপর নিজেরই রাগ হতে লাগল কেমন। নাহ! গিয়ে শুয়ে পড়ি, বলে, আবার শুয়ে পড়লেন। যদিও কেমন যেন একটা কান্না কান্না ভাব এসে গেছিল, যেটা প্রায় ইচ্ছে অনিচ্ছেতে এসেই থাকে ওনার।
ওদিকে ছেলে আর বাবা গান টান করে,স্নান সেরে বেরিয়ে এলো বাথরুম থেকে। তৈরি হয়ে, স্ত্রী কে ডাকলেন। ছেলেও গলা মিলিয়ে বলল- ও মা! ওঠো ওঠো! বাবা বিরিয়ানি এনেছে।
কথায় আছে যে জেগে ঘুমায় তাকে ডেকে তোলা বড়ই কঠিন কাজ! এক্ষেত্রে সেটাই প্রযোজ্য হলো আরেকবার। বিস্তর ডাকাডাকির পর চোখ খুললেন অবশেষে, আর বললেন, তোমরা খেয়ে নাও গো ,আমার তেমন খিদে নেই আজ।
স্বামী কোনোমতে পেটের ভেতর থেকে কিলবিলিয়ে ঠেলে উঠে আসা হাসির দমকটাকে, ঢোক গিলে আবার যথাস্থানে পাঠিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন। তা হয় না জানু। চলো তুমি ডাইনিং টেবিলে, নাকি বিছানাতেই এনে দেবো।
স্ত্রী বললেন না না উঠছি, চল বাবু আয়। বলে টেবিলে গিয়ে বসলেন। স্বামীর একটু সেবা পাবেন অনেকদিন পরে, এসব তো রোজ রোজ আর সৌভাগ্যে হয় না, যদিও মনে মনে হচ্ছিল সৌভাগ্য না হতভাগ্য কে জানে! এদিকে সুন্দর করে প্লেটে সাজিয়ে ছেলের জন্য বিরিয়ানি এলো, আজ যেন বিরিয়ানির গন্ধ টা একটু বেশি ভালো লাগতে লাগল নাকে স্ত্রীর। স্ত্রীর জন্য এলো স্পেশাল ভাত, ডাল সিদ্ধ আর আলু মাখা। ছেলে তো শুরু হয়ে গেলো,একবার বললো, মা খাবে? মা ঘাড় নাড়ল না বাচক। এরই মধ্যে নিজের টাও প্লেটে ঢেলে আনা হয়ে গেছে স্বামী মহোদয়ের।
কই গো খাও, স্ত্রীকে বললেন। তারপরে ওষুধ খেতে হবে তো। স্ত্রী একরাশ অনিচ্ছা স্বত্বেও ভাতে হাত দিয়ে, ডাল টা ঢালতে যাবেন পাতে, ঠিক তখনই হঠাৎই হাতটা ধরে ফেললেন স্বামী তাঁর। আর ফিক করে হেসে বললেন, থাক! রাখো, নীচে ডালের বাটি।
কেনো, কি হলো!
না ঐ স্পেশাল মেনু আর খেতে হবে না এখন, তোমার জন্যও এনেছি, বলে উঠে একটা কাববোর্ড থেকে বের করে আনলেন, আর একটা বিরিয়ানির প্যাকেট। প্লেটে ঢেলে নিয়ে আসলেন স্ত্রীর জন্য।
বললেন নাও খাও। সবাই মিলে খাই।
স্ত্রী বললেন শরীর খারাপ হলে কেউ বিরিয়ানি খায় বুঝি! তুমি ওটা তুলে রেখে দাও। রাতে ছেলে খেয়ে নেবে।
আচ্ছা শরীর খারাপ! দেখো একটা কথা আছে সাপের হাঁচি বেদে চেনে, বুঝেছো! দেবো নাকি একটু কুতোকুতি,দেখি কেমন শরীর খারাপ!। এই না বলে একটু কাছে যেতেই স্ত্রী একগাল হাসতে হাসতে বললেন, না! না একদম না,খাচ্ছি খাচ্ছি!
বাবু পাস থেকে হেসে বলে উঠলো, বাবা তোমার স্পেশাল মেনুটা তাহলে কে খাবে? বাবা হেসে বললেন, ওটা রাতে হবে, সবাই খাবো, আর মামনি তো রাতে রান্না করবে, মায়ের তো আজ হাফ ডে অফ ছিল। এরপরেও একটা জিনিস আছে সেটা আমি ডিপ ফ্রিজে রেখেছি।
কথাটা শোনামাত্র ছেলে একলাফে উঠে ফ্রিজের দিকে দৌড় দিল।