লিখেছেন – শশাঙ্ক
শিউলি — সবাই ওকে প্রিয়াঙ্কা নামে চেনে,
বেশ কিছু মাস আগে,ওকে মাধুরী বলে ডাকতো লোকে.
ওদের তো তেমন কোনো বাঁধা-ধরা নাম হয়না.
বাঁধা ধরা জীবন যাপনের বাইরে যে ওরা .
***********************************************************************
সন্ধ্যা নেমেছে..
হানি হাউস হোটেলের ৬নাম্বার ঘরের দরজার সামনে, দাড়ালো শিউলি.
এই ঘরে’ই আকন্ঠ্য অপেক্ষারত এক হোয়াইট কলার বাবুমশাই.
হ্যান্ড ব্যাগ থেকে,এক নিমেষে বডিস্প্রে’র একটা কন্টেনার বের করে; বার কয়েক ঝাঁকিয়ে, বুকের ওড়না সরিয়ে ফস-ফস শব্দে,মেখে নিলো চটপট.
–বেল প্রেস করলো শিউলি,
দরজা খুললো….
কামনাতুর চোখে পা থেকে মাথা অবদি মেপে নিচ্ছিলো বাবুমশাই’ মেয়েটিকে…
ঘরে ঢুকে স্বাবলীল ভঙ্গিমায় সোফায় বসলো মেয়েটি.
———————————————————————————.
—“বিয়ার না হুইস্কি ? ” জিগ্যেস করলো লোকটি.
একগাল হেসে শিউলির উত্তর…
” বিয়ার’টাই হলে ভালো..সাথে একটু আইস “
গল্পের পরবর্তী পটভূমি………….
———————————————————————————–
সুগন্ধি শিউলির নিটোল শরীরে ফুল ফর্মে থাবা বসাচ্ছে সভ্য চামড়ায় ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা,এক ক্ষুদার্থ হায়না .
লোলুপ চঞ্চল জিভ’টা সরীসৃপ’এর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিল, শিউলির সর্বাঙ্গে,
জাপ্টে জড়িয়ে ধরলো, দুজোড়া হাত পরস্পর দুটো উন্মুক্ত পিঠ..
পাতলা একটা মোলায়েম চাদরের মধ্যে যেন,তোলপাড় হচ্ছিলো..
বাবুমশাই’টি নিজের ইচ্ছেমতো,বিভিন্ন্য শৈলী’তে কিনে নিচ্ছিলো গোটা শিউলি কে. ,
আদুরে অত্যাচারে ঝরে পড়ছিলো ভোরের শিউলি.
ঘামে ভাসছিলো দুটো নোনতা শরীর .
নিজের পুরুষার্থঃ উজাড় করে দেওয়ার ক’এক মুহূর্ত আগে, ঠোঁট রাখতে গেলো লোকটি গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট’টায় ..
বুকভরা, অবাককরা একরাশ অস্বস্তির সাথে মুখ ঢাকলো শিউলি..
চিৎকার করে বললো..
— — —– “না !!!! “
********************************************************************
আকাশ থেকে পড়লো অন্যজন..
দুধে চোনা পড়লো হয়তো’বা.
নিম্নাঙ্গ এগিয়ে গেলো.
ঘনিষ্ঠতর সীমানা পেড়িয়ে, ঘনিষ্ঠতম হলো . .
তাহলে দ্বিতীয় চেষ্টা…….
–” না….একদম না…….”
প্রতিবাদ জানালো শিউলি..
নেশা কাটলো বাবুমশাই’এর .
–“এটা আমার’ই থাক, নেবেন না প্লিস ”
—চোখ দুটো যেন জবাফুলের মতো লাল হয়ে গিয়েছিলো লোকটির.
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে উঠলো…
“সতীপনা হচ্ছে??”
–“৮০০ টাকার **গী !”
–দুচোখে জল শিউলির..খদ্দের কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে,বুকে চাদর জড়িয়ে উঠে গেলো এক লহমায়.
–“একটা পয়সাও পাবিনা কিন্তু !!, শুয়ে পর বলছি .ভালোয় ভালোয় ”
কোনো কথায় কান না দিয়ে, সোফায়; খোলা অগোছালো জামা কাপড়গুলো তুলে,কাঁধে ফেলে, ওয়াশ রুমে ঢুকলো,….মুখ আঁধার করে, শুভ্র সাদা শিউলি..
এদিকে বিরক্তিকর ভাবে আন্ডারওয়ের’টি পড়ে,কিছুটা ল্যাদ খেয়ে, গুম মেরে আধশোয়া অবস্থায় বিছানায়,একটা সিগারেট ধরালো লোকটি..
******************************************************************
কিছু মুহূর্ত পর ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো শিউলি.
যেন তার জন্যই মুখিয়ে ছিল লোকটি..
গজ গজ করে বললো–
–“ভিকু ভাইকে কিন্তু ফোন করবো আমি,”
“আমার টাকা ফেরত চাই.”
“পুরো গুনে গুনে ৮০০ দিয়েছি ..”
-ঘুরে তাকালো মেয়েটি….অশ্রু উধাও,তার চোখে ঠিকরে বেরিয়ে আস্তে চাইছিলো আগুন যেন.
ব্যাগ খুললো,…..গুনে গুনে আটশো টাকা বের করে ছুড়ে দিলো হাওয়ায়..
লোকটির শিরদাঁড়ায় কোনো জোর ছিলোনা,ঘুরে দাঁড়ানোর..
মৌন হয়ে রইল কেবল.
*****************************************************************
গল্পের শেষ পটভূমি…..
নার্সিং হোমের বেড’এ শায়িত,লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত মানুষটির পা জড়িয়ে বসে আছে শিউলি নামের মেয়েটি.
পাশে সাত বছরের মিষ্টি একটি ছেলে.
সন্তানের ভবিষ্যৎ,ভালোমন্দ ,স্বামীকে মৃত্যুর কোল থেকে কেড়ে আনার তাগিদ তাকে আজ এভাবে , পথের বাঁকে এনে দলছাড়া,পথ হারা করে দিয়েছে যে.
দু চোখ মেলে,পিট্ পিট্ করে তাকাচ্ছে মৃত্যু পথযাত্রী..
নোনা জলে ভাসছে শিউলির গাল..
ইশারা করে কাছে ডাকছে অসমর্থ মানুষটি..চোখের জল মুছে ঝুকে পড়লো শিউলি..
টোল ধরা গালে,নির্লিপ্ত হাসি টেনে,একরাশ প্রেমপ্রীতি ও আবেগ মাখানো,ঠোঁট রাখলো,মানুষটির শুকনো ঠোঁটে…
ভালোবাসার স্তবক শুধুই ভালোবাসার মানুষের জন্য. ,
_________________________________________