– থাক থাক হয়েছে, বসো। আজকাল তো পায়ে হাত দিয়ে প্রণামের চল উঠেই গেছে। তা নাম কি তোমার?
– আঙ্কেল,আমার নাম …
– এই হচ্ছে তোমাদের সমস্যা। কেন, বাংলায় বলার মতো সম্বোধন খুঁজে পাওনা? কি যে এত অসুবিধা তোমাদের বাংলায় কথা বলতে….
– না আসলে…..
– যাক গে! বলো নাম কি?
– কাকু, রুদ্র দেবনাথ।
– রুদ্রদেব নাথ? বাহ!
– না না কাকু, রুদ্র দেবনাথ।
– আমিও তো তাই ই বললাম। রুদ্রদেব নাথ।
– না কাকু, নাম রুদ্র, টাইটেল দেবনাথ।
– অহ্! শুধু রুদ্র! তা, কোথায় থাকা হয়?
– ওই যে জাহান্নামে…..
– অ্যাঁ! জাহান্নামে?!
– না না না, জাহান্নামে নয়। ‘জাহান’ নামে আব্দুল আলী রোডের ধারে একটা পার্ক আছে, তার ঠিক পাশেই।
– তাই বলো! কি করা টরা হয় তাহলে?
– এই হৃদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপার নিয়ে একটু চর্চা করি আর কি।
– মানে! এ আবার কি পেশা!তাছাড়া গুরুজনের সামনে এসব কি ভাষা !
– ভুল বুঝছেন কাকু, আসলে আমি কার্ডিওলজির কথা বলছিলাম।
– তা সেটা আগে বলতে কি হয়েছিল?
– না, আপনি ওই বললেন যে বাংলা ভাষায়..
– উফ, তাই বলে…! যাক গে যাক, তোমার বাবা কি করেন?
– এই পেপার বিক্রি করেন আর কি।
– পেপার বিক্রি?! তাছাড়া, এই বয়সে…..
– আজ্ঞে স্ট্যাম্প পেপার।
– ওহ,স্ট্যাম্প পেপার! আমি ভাবলাম…..।
তোমার বাড়িতে তুমি বাবা ছাড়া আর কে কে আছেন?
– তিনকন্যা।
– সে কি! তোমার নাকি?
– এ বাবা, ছি ছি! কি যে বলেন! বিয়েই তো হলো না!
তিনকন্যা মানে আমার মা-মণিমালিকা,বোন-মৃন্ময়ী আর রতন ।রতন রান্নাবান্না,ঘরের কাজকর্ম করে।
– আচ্ছা, ভালো ভালো। বেশ রাবীন্দ্রিক ব্যাপার তো!
ঠিকাছে, কথাবার্তা তো হলো।আর আমার মেয়ের পছন্দের উপর আমার যথেষ্ট ভরসা আছে।সে যখন তোমাকে পছন্দ করেছে তখন আমার দিক থেকে কোনও আপত্তি নেই।
তবে এসব ক্ষেত্রে জন্মকুণ্ডলী মেলানোর ব্যাপারগুলো একটু মানতেই হয়।আশা করি তোমার পরিবারেও মানা হয়। তা তুমি কি নিজে কিছু জানো টানো তোমার সম্পর্কে ..
– আসলে কাকু,আমার বেশি কিছু জানা নেই এই ব্যাপারে।তবে এইটুকু জানি যে আমি হলাম মৎস্যকন্যা।
– অ্যাঁ! ম্মানে??
– মানে,মীনরাশি,কন্যা লগ্ন।
– ওহ হো। তাই বলো।আমার তো পিলে চমকে গেছিলো আর কি!
তবুও তোমার কুণ্ডলী টা একবার দিও। মিলিয়ে নিতে হবে।আর তোমার বাবার নম্বর টা যদি…
– হ্যাঁ কাকু। আমি দিয়ে দিচ্ছি।
– বেশ। এখন যাও,ভিতরে কিছু মিষ্টিমুখের আয়োজন করা হয়েছে।
– আপনি আসবেন না?
– আমি পরে খাবো।
– আসলে আমি আবার একাহারী নই কিনা……
– একাহারী? সে তো এবাড়িতে আমরা কেউই নই!কেন তোমরা কি…..?
– না না, একাহারী নই মানে বলছিলাম যে আমি একা আহার করতে পারি না…..তাই কাকু আপনিও যদি….ওই একসাথে আর কি…
– বটে? আচ্ছা, চলো তবে।আসলে তোমার কাকিমা মারপিঠে যা….
– মারপিটে! সে কিই!
– আহা, মারপিটে নয়, মা’ র পিঠে। মানে তোমার কাকিমা একদম আমার মা’র মতো পিঠে যা বানায় না! মনে হয় যেন মা’র হাতের পিঠেই খাচ্ছি।
– ওহ হো হো হো….. তাই বলুন।আমি ভাবলাম…..
– হা হা হা হা…….তা তোমার ভাবনাটাও খুব একটা ভুল নয় কিন্তু ।নাও চলো চলো।
– অ্যাঁ!সে কি! আচ্ছা,আপনার মেয়েও কি তাহলে কাকিমার মতো………..?
– সেটা তো বাবা ক্রমশ প্রকাশ্য. ……নাও এসো এসো……।দাঁড়ালে কেন! এসোওও……
**
😂😂😂 Funny